Sunday, 17 May 2020

মৃত্যু যেখানে

মৃত্যু যেখানে 

কোডেক্স গিগাস বা শয়তানের বাইবেল। নাম টার সাথে আমরা কম বেশি সবাই পরিচিত। ত্রয়দশ শতাব্দীতে লেখা এই বইটি পৃথিবীর এখনো পযর্ন্ত সবচেয়ে বড় বই। তিন ফুট লম্বা কুড়ি ইঞ্চি চওড়া এবং প্রায় সাড়ে আট ইঞ্চি মোটা  সেই বই। বিজ্ঞানীরা বলেন যে কোনো ব‍্যাক্তি যদি দিনে চব্বিশ ঘন্টা কাজ করেন তাতেও বইতে যত ছবি এবং লেখা আছে তাতে প্রায় পাঁচ বছর কম করে লাগার কথা। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে বইটা লেখা হয়েছে মাত্র কয়েক দিনে বা সপ্তাহে। জনশ্রুতি কোনো এক ব‍্যাক্তি মাত্র এক রাতে সমগ্র বইটি সম্পূর্ণ করেছিলেন। আর তার জন্য তিনি আশ্রয় নিয়েছিলেন এক শয়তানের। বইটি খুললেই দেখা যায় এক বিভৎস মূর্তি যা কথিত আছে বিশ্বের একমাত্র সত্যি শয়তানের ছবি যা নিজের হাতে তৈরি করেছিলেন শয়তান স্বয়ং। বাকি আমরা যে শয়তানের ছবি দেখতে পাই তা শুধুই শিল্পীর শিল্প কল্পনা।
যাই হোক, আমার এই শয়তানের বাইবেল নিয়ে কোনো মাথা ব‍্যাথা নেই। নেই কোনো উৎসাহ। কিন্তু আমার গল্পের যোসেফ কিন্তু এতে এতোটাই উৎসাহিত ছিল যে সেই বর্ণনাই হয়ে উঠেছিল রোমাঞ্চকর।

*********

ধরা যাক গল্পটার সময় কাল আজ থেকে দু'শো বছর আগের। স্থানটা ধরা যাক ইংল‍্যান্ডের কোনো এক গ্রাম।
যোসেফ ছিল এক খ্রিষ্টীয় যুবক। অবশ‍্য যুবক কিনা সেটা সঠিকভাবে ঠিক বোঝা যেত না। তার উচ্চতা ছিল খুব বেশি হলে আড়াই ফুট। কিন্তু কন্ঠস্বর যথেষ্ট ভাড়ি। তার বয়স সঠিকভাবে কেউ বলতে পারত না। কেউ বলত তিরিশ, কেউ বলত চল্লিশ আবার কেউ বলত পঁচিশ।  সবার কাছে সে ছিল হাসি মজার পাত্র। যখন সে স্কুলে যেত সব ছেলেরা ওকে ঘিরে ধরত আর নানা মজা টিটকিরি করত। একদিন সে স্কুল থেকে ফিরে ঠিক করল আর রাখবে না এই জীবন। শেষ করে দেবে সব। পাশের ঘরে থাকা মা কিছু একটা আন্দাজ করে ছুটে আসে ছেলের ঘরে। ছেলের ওই অবস্থা দেখে চিৎকার করে ওঠে সে। চিৎকারে হুস ফেরে যোসেফের। কাদতে কাদতে সে লুটিয়ে পড়ে মাটিতে। এদিকে মাও ছেলের কষ্ট দেখে আর স্থির থাকতে পারেনা। নিজেও কম কথা শোনেনা এরকম ছেলের জন্য। তাই ছেলের হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে গেল এক ব‍্যাক্তির কাছে। তারা ঘরে ঢুকে দেখল একটা অন্ধকারাচ্ছন্ন ঘর। ঘরের মাঝখানে একটা পাঁচ মুখি তারা আঁকা। আর ঠিক তার মাঝখানে জ্বলছে একটা মোমবাতি। যোসেফ কে দেখেই কাছে ডেকে নিলেন তিনি। নিজের পরিচয় দিলেন জ‍্যাক। শিখিয়ে দিলেন নানান শয়তানের উপাচার ও মন্ত্র। সাথে দিলেন একটা ছবি। শয়তানের নিজের ছবি। তবে সেটা ছিল হাতে আঁকা। মায়ের সাথে বাড়ি ফিরে আসে যোসেফ। সেই রাত থেকেই শুরু হয় তার শয়তান সাধনা। এর ঠিক মাস খানেক পর যোসেফ একদিন স্কুলে গেল। তাকে দেখেই স্কুলের ছেলেরা স্বভাবতই হাসতে লাগল, মজা করল নিজেদের মধ্যে যোসেফ কে নিয়ে। আর এর নেতৃত্বে ছিল হেনরি নামক একটি ছেলে। যোসেফ কিন্তু এবার এক বারও রাগল না, উল্টে মৃদু হাসল শুধু। বাড়ি এসে সাধনায় বসল সে। পরের দিন সকালে হেনরি কে পাওয়া গেল একটা ওক গাছের নিচে। দলা হয়ে পাকানো তার শরীর। কেউ যেন তার শরীর নিয়ে আছড়ে পিছড়ে হাড় সব গুড়ো করে শরীরটা দলা পাকিয়ে দিয়েছে। তার একটা চোখ যেন খুবলে নিয়েছে কেউ, একটা হাত ছিড়ে পাশে পড়ে আছে।
সাফল্য পেয়ে এরপর আরো উৎসাহিত হয়ে ওঠে যোসেফ। শুরু হয় তার জীবনের নতুন অধ‍্যায়। নতুন নতুন বই জোগাড় করে কালো বিদ‍্যার পড়াশুনা শুরু করে সে। এখন তাকে দেখে যারা হাসে বা মজা করে অথবা বাধা দেয় রাগে না সে আর। গোপনে খোঁজ নেয় তাদের। পর দিন তাদের পরিনতী হয় হেনরির মতন।
যোসেফের মা প্রথম দিকে ছেলেকে উৎসাহ দিলেও পরের দিকে মা বুঝতে পারে ছেলের এই সাধনা দিন দিন ছেলে কে আরও খারাপ পথে নিয়ে যাচ্ছে। বাধা দিতে যায় ছেলেকে। কিন্তু যোসেফ এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। মাকে প্রাণে মারল না সে। কিন্তু সে হয়ে গেল আজীবনের জন্য নির্বাক চলৎশক্তিহীন একটি মানুষ।
বিভিন্ন বই নিয়ে পড়াশোনা করতে করতে তার হাতে আসে এমন একটি বই যাতে সে প্রথম খোঁজ পায় কোডেক্স গিগাসের। তারপর থেকেই সে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে সেই বই পাওয়ার জন্য। সে বুঝতে পারে সেই বইতেই আছে তার শক্তি বাড়ানোর পদ্ধতি যাতে সে পৌছাতে পারে শয়তানের আরও কাছে। আছে তার অমরত্বের চাবিকাঠি।
তার বদ্ধমুল ধারণা হয় এই বই আছে জ‍্যাকের কাছে। সে ছুটে যায় জ‍্যাকের কাছে। গিয়ে সোজা বলে " আমায় শক্তির মন্ত্র দিন। অমরত্বের মন্ত্র দিন। "
জ‍্যাক অবাক হয়ে তাকায় যোসেফের দিকে " আমি অমরত্বের মন্ত্র জানিনা।"
যোসেফ বলে ওঠে " আপনি জানেন না, কিন্তু কোডেক্স গিগাস সেটা জানে। "
" কোডেক্স গিগাস? "
" হ‍‍্যাঁ। সেটা আপনার কাছে আছে আমি জানি।"
" সেটা আমি কোথায় পাবো?"
বাস্তবিক। কারণ কোডেক্স গিগাসের স্থান তো অন‍্যত্র। বেশ কিছুক্ষণ কথা কাটা কাটি চলে তাদের এই নিয়ে। এরপর প্রচন্ড রেগে বেড়িয়ে যায় যোসেফ। বাড়ি ফিরে সাধনায় বসে সে। আর তার সাধনার প্রভাব সাধারণ ভাবেই যায় জ‍্যাকের দিকে।
জ‍্যাকও যোসেফের ব‍্যাবহারে কিছু একটা আঁচ করেছিল। তাই সে তৈরি করে বিশ্রী দেখতে এক পুতুল।
যোসেফ এদিকে সাধনা চালিয়ে চলেছে। কিন্তু কিছুতেই যেন আজ ঠিক হচ্ছে না। যতবার তার সাধনার প্রভাব জ‍্যাকের দিকে যায় ততবারই যেন তা অসফল হয়। তখন রাত দুটো। হঠাৎ যোসেফ দেখতে পায় তার সামনে জ্বালানো মোমবাতি থেকে একটা সরু ধোয়ার কুন্ডলী নির্গত হচ্ছে। অবাক হয়ে দেখতে থাকে যোসেফ। ধীরে ধীরে ধোয়ার সেই ছোট্ট কুন্ডলী বড় হতে থাকে। সেই কুন্ডলী যেন তাকে গ্রাস করে নিল। দুর থেকে যেন কারো গলা ভেসে আসছে " তুই অমরত্ব চেয়েছিলি। তোকে অমরত্ব দিলাম। প্রতি একশ বছর অন্তর তুই ফিরে আসবি চলেও যাবি। কিন্তু যাওয়ার সময় নিয়ে যাবি চারটি মানুষের প্রাণ। মোট তিন বার হবে। তারপর তুই হবি অসীম শক্তিশালী, অমর। এখন আর কারো ক্ষতি করতে দেব না তোকে। তুই সেই দিনই সম্পূর্ণ ভাবে বিলীন হবি যেদিন তুই আগুনে জ্বলবি।"
পরের দিন সকালে দেখা গেল যোসেফের মৃত দেহ পড়ে আছে তার ঘরে। অন্যদিকে জ‍্যাকের তৈরি সেই পুতুলের একটা চোখ খুবলানো, একটা হাত ভাঙা। মুখে নিষ্ঠুর হাসি।

**********

**একশ বছর পর **

থমাস নামক এক জনৈক ব‍্যাক্তি এক দিন তার বাড়ির লাগোয়া কুঁয়ো পরিষ্কার করছিলেন। এমন সময় কুঁয়োর নিচের কাদা মাটির সঙ্গে উঠে এল একটা পুতুল। কাদা মাটি মাখা সেই পুতুলের একটা হাত ভাঙা। একটা চোখও খুবলানো। অবজ্ঞা ভরে আবার বর্জের মধ্যে রেখে ফেলে দিয়ে আসে দূরে।
পরদিন সকালে নিজের বাগানে গাছের পরিচর্চা করার সময় থমাস দেখতে পায় গাছের আড়ালে উঁকি দিচ্ছে সেই হাত ভাঙা পুতুলটা। এবার খুব অবাক হয় থমাস, সাথে কিছুটা ভয়ও পায় সে। পুতুলটার নিষ্ঠুর হাসি তাকে আরো ভীত করে। সে পুতুল টাকে হাতে নিয়ে বাড়ি থেকে দূরে ফেলে আসে। সেই রাতে প্রায় দুটো নাগাদ থমাস স্বপ্ন দেখে পুতুল টা যেন তার কাছে এসেছে। তার চেহারা যেন পরিবর্তন হতে শুরু করেছে। সেটা যেন ধীরে ধীরে একটা মানুষের রূপ নিচ্ছে সেটা। তার ক্রুঢ় হাসি মাখা মুখ টা যেন তাকে খুন করতে আসছে। ভীষণ ভয়ে জেগে ওঠে সে। চমকে পাশে তাকিয়ে দেখে একটা পুতুল উল্টো হয়ে পড়ে আছে তার বিছানার পাশে। হাতে নিয়ে দেখে সেই হাত ভাঙা পুতুল টা। পরদিন সকালে থমাসের দুমড়ান শরীর টা পাওয়া গেল কুঁয়োর পাশে, চোখ খুবলানো, হাত ভাঙা।
এর সপ্তাহ দুয়েক পর রোজী একদিন ঘর পরিষ্কার করছে। বাবা থমাসের অন্তেষ্টি ক্রিয়া কিছু দিন আগে শেষ হয়েছে। বাবাকে সদ‍্য হারিয়ে মন খুব খারাপ। বিছানার নিচ পরিষ্কার করতে গিয়ে রোজি দেখতে পায় একটা পুতুল পড়ে আছে সেখানে। বিশ্রী দেখতে সেই পুতুল তুলে রাখে রোজি। ভাবে যারা এসেছিল বাবাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে তাদের মধ্যেই কোনো বাচ্চা বোধহয় ফেলে গেছে। কেউ খোঁজ করতে এলে তাকে দিয়ে দেবে। আবার কাজে মন দেয় রোজি। কিন্তু রোজির মনে হয় ঘরের মধ্যে যেন সে ছাড়াও আরও কেউ আছে। ভাই উইলিয়াম এখনো ফেরেনি ঘরে। আজ কাল যেন একটু চুপ হয়ে গেছে। তাহলে ঘরে কে? সে যেন তার গতিবিধি লক্ষ্য করে চলেছে।
সেই রাতে তখন প্রায় রাত দুটো। হঠাৎ রোজির ঘুমের মধ্যে একটা অস্বস্তি শুরু হয়। দেখে একটা বেটে খাটো লোক দাড়িয়ে আছে ঠিক যেখানে সেই পুতুল টা ছিল। লোকটা তার দিকে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে, ঠোঁটে যেন একটা নিষ্ঠুর হাসি। ভয়ে চিৎকার করে ওঠে রোজি। চিৎকার শুনে পাশের ঘর থেকে ছুটে আসে উইলিয়াম। তাকে দেখে ভয়ে কাদতে থাকে রোজি। সব শুনে উইলিয়াম এগিয়ে যায় পুতুল টার দিকে। পুতুল তখন নিঃশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। হাতে তুলে নেয় উইলিয়াম সেই বিশ্রী পুতুলটা। ফেলে দিয়ে আসে বাড়ির বাগানে। দিন কয়েক পর উইলিয়ামের এক বন্ধু ডেভিড আসে তাদের বাড়ি। ডেভিড শুধু উইলিয়ামের বন্ধু ছিল না। ছিল রোজির বাগদত্তা। অনেক্ষণ গল্প চলে তাদের। সন্ধ্যার পর ডেভিড ফিরতে চাইলে উইলিয়াম তাকে এগিয়ে দিতে যায়। বড় রাস্তায় যখন এসে পড়ে তারা হঠাৎ কেন যেন ভাবাবিষ্ট হয়ে পড়ে উইলিয়াম। হঠাৎ চোখের সামনে একটা কালো ধোয়ার আবরন সৃষ্টি হয়। তার মনে হয় সেই ধোয়া যেন তাকে ঘিরে ধরছে ক্রমশ। সে শক্ত করে চেপে ধরল ডেভিডের হাতটা। কখন যে একটা বড় গাড়ি এসে গেছে তাদের সামনে খেয়াল করেনি ওরা। গাড়ি টা ওদের ওপর দিয়ে চলে গেল। দুজনের শরীর দুটো দলা পাকিয়ে পড়ে থাকল রাস্তার ওপর। তাদের দুজনের দুটো হাত কাটা, চোখ দুটো যেন বেড়িয়ে আসছে কোটর থেকে।
ছোটবেলা থেকেই মা হারা রোজি। বাবা দুই ভাই বোন কে একাই মানুষ করেছে। সেই বাবা আর নেই। একমাসের মধ্যে ভাইকেও হারালো সে। যার সাথে জীবন বাধার স্বপ্ন দেখেছিল সেই ডেভিডও আজ আর বেচে নেই। গভীর হতাশা ঘিরে ধরে রোজিকে। একদিন রাতে তখন প্রায় দুটো। হঠাৎ ঘরে যেন কিছুর অস্তিত্ব টের পায় সে। বিছানা ছেড়ে উঠে বসে সে। পাশ ফিরতেই চমকে ওঠে রোজি। সেই হাত ভাঙা চোখ খোবলানো পুতুলটা। দাঁড়িয়ে আছে সেখানেই যেখানে রোজি ওটাকে রেখেছিল। কিন্তু এই পুতুল তো বাইরে ফেলে এসেছিল উইলিয়াম আর এতদিন তাকে কোথাও দেখতেও পায়নি সে।
দেখতে দেখতে পুতুল টার গা থেকে যেন ধোঁয়ার কুন্ডুলী বের হতে শুরু করে। রোজি খুব অবাক দৃষ্টিতে এগিয়ে যায় তার দিকে। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সেই দিকে। ধোঁয়ার কুন্ডলী যেন এগোতে শুরু করেছে। পিছু পিছু এগিয়ে যায় রোজি। ধোঁয়ার কুন্ডলীটা এতক্ষণে যেন ঘিরে ধরে তাকে। চলে আসে রোজি কুঁয়োর একদম ধারে। উঠে পড়ে কঁয়োর পাচিলে। হঠাৎ পিছন থেকে কেউ যেন ধাক্কা দেয় তাকে। চিৎকার করে কুঁয়োর ভিতর পড়ে যায় সে। এত রাতে চিৎকার শুনে প্রতিবেশিরা ছুটে এসে দেখে রোজি পড়ে আছে কুঁয়োর ভিতর। তাকে তুলে আনলে দেখা যায় সে মৃত। কুঁয়োর প্রাচীরের ধাক্কায় তার এক হাত ভেঙে গেছে। পাথরের উপর পড়ায় একটা চোখ তার উঠে এসেছে।

*******

** আরো একশ বছর পর **

স্মিথ আর তার পরিবার তাদের ছুটি কাটাতে গেছে এক সমুদ্র সৈকতে। এক দিন স্মিথের সাত বছরের ছেলে জন খেলতে খেলতে এসে যায় একদম সমুদ্রের জলের কাছে। হঠাৎ তার চোখে পরে কিছু একটা বালির ওপর চকচক করছে। এগিয়ে যায় সে। দেখে ছোট্ট একটা পুতুল। কিন্তু পুতুলটা কেমন যেন অদ্ভুত ধরনের দেখতে। তুলে নেয় সে হাতে। ভাইকে কিছু করতে দেখে এগিয়ে আসে তার দিদি কাইলি। দিদিকে দেখে উচ্ছসিত ভাই চিৎকার করে ওঠে " দেখ দিদি আমি এখানে একটা পুতুল পেয়েছি।" বলে দিদির হাতে দেয় সে পুতুল টা। এগারো বছরের দিদি কাইলি হাতে নেয় পুতুল টা। কিন্তু হাতে নিয়েই কেমন যেন অনুভূতি হয় তার। পুতুলের দিকে তাকাতেই চমকে ওঠে সে। সাধারণ একটা পুতুল। কিন্তু বিভৎস সেই পুতুলের চেহারা। তার ডান চোখ কেউ যেন খুবলে নিয়েছে। কালো হয়ে আছে জায়গা টা। আরেকটি চোখে ক্রূড় দৃষ্টি। মাথার দিক টা ভেঙ্গে গেছে কিছুটা। একটা হাত ভাঙা। মুখে একটা তীব্র নিষ্ঠুর হাসি। হাতে নিয়েই ভয়ে পুতুলটা ছুড়ে ফেলে দেয় সমুদ্রের জলে। হাত ধরে টেনে নিয়ে আসে  ভাইকে। ভাই আর কি করে, বেজার মুখে দিদির সাথে চলে আসে।
এর কিছুদিন পর তারা ফিরে আসে বাড়িতে। বাড়িতে ঢুকে নিজের ঘরে যায় জন। আর দরজা খুলতেই সে চমকে ওঠে। খুশিতে খেলে যায় তার ছোট্ট মন। তার নিজের বিছানার ওপর বসে হাসছে কুড়িয়ে পাওয়া সেই পুতুল টা। জন যেন পায় তার খেলার সঙ্গী, তার বন্ধু। খুব যত্নে  আদর সবার থেকে আড়াল করে রাখত সে পুতুল টাকে।
এর কিছুদিন পর রাত তখন প্রায় দুটো। হঠাৎ ঘুমের মধ্যে কেমন যেন অস্বস্তি হতে শুরু করে স্মিথের। ঘরে যেন কেউ একটা আছে। ঠিক তার বিছানার পাশেই যেন দাঁড়িয়ে আছে এক বিশালাকার মুর্তি। তার দিকেই যেন তাকিয়ে আছে আগুন চোখে। ভীষন ভয়ে উঠে বসে স্মিথ। চারদিকে তাকিয়ে দেখে সে। নাহ্ কোথাও কিছু নেই। স্ত্রী  এমিলি পাশে ঘুমিয়ে। নিছকই দুঃস্বপ্ন ভেবে স্মিথ একটু জল খেয়ে আবার শুয়ে পরে।
পরের দিন রাত দুটো। কাইলি ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখে সেই বিভৎস ভয়ংকর পুতুল টা যেন আবার ফিরে এসেছে তার কাছে। কাইলি যতই দূরে যাওয়ার চেষ্টা করছে ততই যেন পুতুল টা এগিয়ে আসছে তার কাছে।। আস্তে আস্তে যেন পুতুল টা মানুষে পরিনত হচ্ছে। যার উচ্চতা খুব বেশি হলে আড়াই ফুট। মুখে একটা হিংস্র ক্রুড় হাসি।
জন কিন্তু খুব খুশি। সে তার সাথে গল্প করে, খেলে। জন জেনেছে তার নাম যোসেফ। একদিন যোসেফ জন কে বলছিল " তোর দিদি টা খুব  খারাপ। আমায় কেমন জলে ফেলে দিয়ে ছিল। ওকে তো আমি.... " জনও তার কথায় সায় দেয়। " জানো যোসেফ কেউ জানেনা তুমি আমার বন্ধু। আমি তো কাউকে জানতে দেয়নি তুমি আমার কাছে আছো। যদি কেউ আবার ফেলে দেয় তোমায়।" ঠিক এই সময় কাইলি আসে ভাইয়ের গলা শুনে, কার সাথে কথা বলছে জন? ঘরে ঢুকেই প্রচন্ড ভয় পেয়ে যায় যোসেফ কে দেখে। চমকে উঠে চিৎকার করে ওঠে সে " কোথায় পেলি জন একে? একে তো আমি ফেলে দিয়েছিলাম সমুদ্রের জলে। " জন হাসে। এগিয়ে যায় দিদির দিকে। " জানিস দিদি আমি ওকে পাইনি। ও নিজেই এসেছে আমার কাছে, এই ঘরে। ও আমার বন্ধু। আয়না আয়। " "না। " চিৎকার করে কাইলি বলে " ফেলে দে। ওকে ফেলে  দে। " বলেই দৌড়ে সিঁড়ি দিয়ে নামতে যায়, কিন্তু হঠাৎ ওর মনে হল কেউ যেন ওকে পিছন থেকে ধাক্কা দিল। অনেক দিন পর বিছানা ছাড়তে পারেনি কাইলি। একটু সুস্থ হয়ে  উঠলেও কাইলির গলার স্বর আর ফিরে এল না। ফ‍্যাল ফ‍্যাল করে চেয়ে থাকে শুধু আর সেই পুতুল টার কথা মনে এলেই ভয়ে গুটিয়ে যায় সে।
স্মিথ কিন্তু যোসেফের উপস্থিতি ভালই অনুভব করত।
একদিন রাতে স্মিথ দেখে তার স্ত্রী এমিলি বিছানা ছেড়ে উঠে এগিয়ে চলেছে দরজার দিকে। মন্ত্রমুগ্ধের মত দরজা খুলে ফেলল সে। সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে গেল সে। চোখ স্থির। কেউ যেন তাকে দিয়ে সব করিয়ে চলেছে। এমিলি যেন আর নিজের বশে নেই। স্মিথ ডাকে " এমিলি "। কোনো উত্তর আসে না। এগিয়ে চলে সে। এবার স্মিথের কেমন যেন ভয় হতে শুরু করে। দৌড়ে গিয়ে টেনে ধরে এমিলির হাত। চেপে জড়িয়ে ধরে তাকে। এমিলি যেন জেগে উঠল। অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখে সে কিভাবে নিচে নেমে এসেছে। তার শুধু মনে আছে একটা ধোঁয়ার কুন্ডুলী তার দিকে এগিয়ে এসেছিল।
এই ঘটনার পর স্মিথ বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে সম্পূর্ণ ভাবে। একে মেয়ের এরকম অবস্থা। বাড়িতে সব সময় যেন একটা ভয়ের ভীতি। ঠিক করে পরিবার নিয়ে দূরে কোথাও ঘুরে আসবে। সেই মত একদিন সবাই তৈরি হয়ে রওনা দিল দূরের উদ‍‍্যেশ‍্যে। স্মিথ নিজের গাড়ি তার আগেই ঠিক করে রেখেছে যাতে রাস্তায় কোনো অসুবিধায় পড়তে না হয়।
বেশ চলছিল গাড়ি। ড্রাইভিং করছে সে নিজেই। সবার মন আজ খুশি। মুক্তির আনন্দে যেন ভেসে যাচ্ছে তারা। হঠাৎ স্মিথের কিছু একটা যেন হল। চোখের সামনে একটা ছোট্ট মানুষ যেন বা দিক থেকে ডান দিকে সরে গেল। গাড়ির ব্রেক টা চাপার চেষ্টা করল। কিন্তু কোনো লাভ হল না। লাভ হবে কি করে? তখন যে সেই হাত কাটা চোখ খোবলানো বিভৎস পুতুল টা ছোট্ট জনের ছোট্ট ব‍্যাগে বন্দি। তার বন্ধু, খেলার সাথী। তাকে রেখে কিভাবে জন একা যাবে বেড়াতে? তাই তা সঙ্গী যোসেফ। 
গাড়ি টা প্রবল বেগে ছুটে চলেছে। স্মিথের সামনে তখন ধোঁয়ার কুন্ডুলী। কিচ্ছু দেখতে পারছে না সে। পারছেনা সে থামাতে গাড়ি টা।গাড়ি টা সোজা গিয়ে ধাক্কা মারল একটা প্রকান্ড গাছের সাথে। সাথে গাড়ির এ‍্যক্সেলেটার ফেটে গিয়ে প্রচন্ড বিস্ফোরণ ঘটিয়ে সারা গাড়ি তে আগুন লেগে গেল। 
যোসেফ পেল আরো চারটি তাজা প্রাণ। আর মোটে একবার তাহলেই অসীম শক্তিশালী, অমর। কিন্তু যোসেফ ছোট্ট একটা ভুল করে ফেলল। অমরত্ব ও আরো শক্তিশালী হওয়ার আনন্দে সে ভুলে গিয়েছিল গুরুর কথা। সে তো বলেছিল আগুন লাগলে সে ধ্বংস হয়ে যাবে। আর সে যে ছিল সেই গাড়ির ভিতরে। 

যুযুৎসু

মহাভারতের অজানা চরিত্র যুযুৎসু মহাভারত বিষয়ে আমরা অনেক কিছু জানলেও অনেক চরিত্র এখনো অনেকের অজ্ঞাত। কথায় আছে যা নেই মহাভারতে তা নেই ভূ-ভার...