মুক্তি
ভাবছিলাম কিছু একটা লিখি। কিন্তু কি লিখব কিছুই মাথায় আসছে না। রাতে খাওয়া সেরে এক কাপ দুধ ছাড়া কালো কফি যাকে সাহেবি কায়দায় বলে black coffee নিয়ে বসলাম। হঠাৎ মনে এল আমার জীবনে ঘটে যাওয়া এক আশ্চর্য ঘটনা যার সাক্ষী আমি স্বয়ং। আজ বছর খানেক পরে সেটাই লিপিবদ্ধ করছি।
*******
আমি অমিত রায়। একটা পত্রিকার অফিসের এডিটর। লেখা লেখির অভ্যেস আছে। আর সেই কাজে দিন দুয়েক হল এই বাড়িতে এসেছি। এটা সুদীপ এর বাড়ি। সুদীপ আমার কলেজের বন্ধু। সুদীপের সাথে হঠাৎ সেদিন বাস স্টপেজে দেখা। প্রথম টায় ঠিক চিনতে পারিনি। ওই এগিয়ে এল। "আরে অমিত! তুই এখানে?" কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললাম " সুদীপ!"
" চিনতে পেরেছিস তাহলে? তারপর কি করছিস? কোথায় আছিস? " আরও কত প্রশ্ন করে গেল। আমিও প্রত্তুতরে সব বলে গেলাম। সেও আমায় সব বলল তার কথা। সে একটা প্রাইভেট অফিসে কাজ করত। এখন কি এক কারণে সেটা ছেড়ে নতুন কাজ দেখার চেষ্টায় আছে।
পুরোনো কলেজের বন্ধু পেলে যা হয়, গল্প তো আর শেষ হতেই চায়না। ইতিমধ্যে আমরা একটা কাফে তে বসেছিলাম গল্প করতে। কলেজের গল্প। বন্ধুদের গল্প। কে কি করছে এই নিয়ে কথা বলতে বলতে কখন ঘন্টা দুয়েক পেরিয়ে গেছে খেয়াল করিনি।
কথায় কথায় বললাম যে একটা নিরিবিলি জায়গা খুজছিলাম লেখালেখির জন্য। তো ও শুনেই আমায় বলল " তো চল না। আমার তো একটা বাড়ি আছে ঝাড়খন্ডে। দাদু কিনেছিল। বাবাও মাঝে মাঝে যেত ওই বাড়িতে। কিন্তু কোনো সময় বেশি দিন থাকেনি। আমি অবশ্য কোনো দিন যাইনি ওই বাড়িতে। বাড়ি টা বিক্রির কথা উঠছে। তাই ভাবছিলাম একটু ঘুরে আসি। হাতে তেমন কাজ নেই এখন। যাবি তো চল। কদিন নিরিবিলি তে কাটিয়ে আসা যাবে।
ঠিক হল চার দিন পর আমারা রওনা দেব। যাওয়া হবে আমার গাড়িতে। লম্বা রাস্তা। তাই গাড়িটাও সার্ভিসিং করিয়ে নিয়েছি।
সকাল সকাল রওনা দিলাম দুই বন্ধুতে। পৌছাতে সেই সন্ধ্যা হয়ে যাবে। গাড়ি তে উঠেই মনটা ভালো হয়ে গেল। এতো দিন পর আবার বাড়ি ছেড়ে নতুনের উদ্যেশ্যে।
******
ভেবেছিলাম রাত্রি আট টা নাগাদ পৌঁছে যাব। কিন্তু রাস্তায় একটা লরি ফেসে গিয়ে সব গাড়ি আটকে গিয়েছিল। ফলে প্রায় ঘন্টা দেড়েক লেট। যখন পৌছলাম তখন সাড়ে নয়টা বেজে গেছে।
বাড়ির সামনে এসে আমাদের গাড়ি থামল। অন্ধকারেও বাড়িটা দেখে মন ভরে গেল। একটা বেশ বড় দোতলা বাংলো ধরনের বাড়ি। ঢোকার মুখে ফটকের সামনে পুরোনো জরাজীর্ণ পাথরের এক রূপসী মহিলা আহ্বান জানাচ্ছে। ফটকের গায়ে সাদা পাথরের ওপর লেখা 'এডওয়ার্ড হাউস'। অবাক হয়ে সুদীপের দিকে তাকালাম। ও আমার মনের কথাটা বুঝেছিল বোধহয়। তাকানোর সাথে সাথেই বলে উঠল " কেভিন এডওয়ার্ড। দাদু এনার কাছ থেকেই এই বাড়িটা কিনেছিলেন। তখন মোটে দুটি ঘর ছিল। দাদু তারপর নিজেই পুরো বাড়িটা করেছে। ওই ঘর দুটো এখনো নাকি আছে।"
সামনের লন পেরিয়ে বাংলোর দরজার সামনে এসে দাড়ালাম। দরজা বাইরের দিকে আটকানো। সুদীপ ডাকল " রঘু, রঘু "। পেছনের একটিয়া একটা ঘর থেকে দরজা খোলার আওয়াজে ঘুরে তাকিয়ে দেখি এক শীর্ণকায় লোক বেরিয়ে এল। অন্ধকারে মুখ ঠিক বোঝা গেল না। সামনে এসে জিজ্ঞেস করল " বাবুরা এসেছেন? আপনাদের দেরি দেখে ভাবলাম আজ বুঝি আপনারা আর এলেন না। আসুন।" বলেই হাত থেকে ব্যাগ গুলো নিয়ে দরজার সামনে এগিয়ে গেল।
বাড়ির দিকে যত এগোতে লাগলাম মন টা কেমন বিষন্ন হয়ে আসছিল। কেন যেন মনে হচ্ছিল না এলেই বোধহয় ভালো হত।
দরজার তালা খুলে রঘু একটু চাপ দিতেই দরজা টা শব্দ করে জানান দিয়ে খুলে গেল। আর দরজা খুলতেই একটা বিশ্রী গুমট গরম হাওয়া গায়ে মুখে এসে ঝাপিয়ে পড়ল আর সাথে একটা চাপা গন্ধ। অনেক দিন কোনো ঘর বন্ধ থাকলে যেমনটা হয়। সুদীপ একটু যেন বিরক্ত হয়ে বলল " ঘর কি খোলা হয়না নাকি? এরকম অবস্থা!মুখ ঘুরিয়ে এক বার বিনয়ী হাসল রঘু। চাপা গলায় বলল " আপনারা কিছু দিন এখানে থাকুন বাবুরা নিজেরাই বুঝবেন।" হাত বাড়িয়ে সুইচ টিপতেই পুরো বাংলো টা যেন জেগে উঠল। আর কথা বাড়ালাম না। রঘু আমাদের একটা ঘরে নিয়ে এল।ব্যাগ গুলো রেখে বলল " এই ঘরে আজ রাতে থাকুন। পাশেই বাথরুম। আপনারা তৈরি হয়ে নিন আমি আপনাদের খাবার দিয়ে যাচ্ছি।"
আমরা আছি বাংলোর বড় ঘরটা অর্থাৎ যে ঘর দিয়ে আমরা ঢুকেছি তার ডান দিকের দরজা দিয়ে তিন নম্বর অর্থাৎ কোনার শেষ ঘরে। ওই বড় ঘরের বা পাশের দরজা দিয়ে গেলেও তিনটি ঘর যার মধ্যে দুটি ওই সাহেবের বানানো।
আমরা ফ্রেস হয়ে আসতেই রঘু আমাদের খাবার নিয়ে হাজির। রুটি আর দেশি মুরগির ঝোল।
থালা রেখে যাওয়ার সময় রঘু বলল " খাওয়া হয়ে গেলে বাসন গুলো দরজার বাইরে রেখে দেবেন। তাড়াতাড়ি শুয়ে পরুন। এত দুর এলেন।"
আমারাও খেয়ে নিয়ে থালা বাইরে রেখে হাত ধুয়ে সোজা বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লাম। সারাদিন গাড়ি চালিয়ে ক্লান্তিতে বিছানায় শোয়ার সাথে সাথেই ঘুমিয়ে পড়লাম।
********
তখন রাত কটা হবে ঠিক জানিনা। হঠাৎ কিছু একটা শব্দে ঘুমটা ভেঙ্গে গেল। ঘরের ছোট লাইট টা জ্বালিয়ে শুয়ে ছিলাম। সেটা নিভে গেছে। মোবাইলের আলো জ্বালালাম। কিন্তু পাশের খাটে সুদীপ নেই।
" সুদীপ, এই সুদীপ। " ডাকলাম আমি। কোনো সাড়া পেলাম না। দরজা টা খোলা।
বিছানা থেকে নেমে বাইরে বেরিয়ে দেখি সুদীপ কোথাও নেই। খুজতে খুজতে বড় ঘরটায় এলাম। বা দিকের দরজা টা খোলা। এগিয়ে যেতে দেখি সুদীপ দাড়িয়ে আছে একটা বন্ধ দরজার সামনে।
কেমন যেন ভয় লাগল। ডাকালাম " সুদীপ"।
ঘুরে তাকাল আমার দিকে। ফেকাশে মুখ। ছোখ দুটো স্থির
********
পরের দিন ঘুম ভাঙল রঘুর ডাকে। উঠে ফ্রেস হয়ে চা খেয়ে ঠিক করলাম ওই ঘরেই আমরা যাব। বাড়ির বাকি সব ঘর শুধু ছিটকিনি দিয়ে আটকানো থাকলেও ওই পুরোনো ঘর দুটি তালা লাগানো। রঘুকে ডেকে সুদীপ বলল " রঘু ওই ঘর দুটো তালা লাগানো কেন থাকে? চাবিটা দাওতো একটু ঘুরে দেখি বাড়িটা।
" রঘু কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল " বাবু ওই ঘরে একটু অসুবিধা আছে। আপনারা নতুন লোক, দু'দিন বাদে চলেও যাবেন। তাই বলছিলাম ওই ঘর দুটো নাহয় বন্ধই থাক। "
" কেন? ওখানে কি অসুবিধা আছে? " জিজ্ঞেস করল সুদীপ। "
" আজ্ঞে বাবু বললে আপনারা বিশ্বাস করবেন না। আপনারা কলকাতার মানুষ এসবে আপনাদের মনে আসবে না। "
" ঠিক আছে তুমি বলনা শুনি। বিশ্বাস তো পরের কথা। " বললাম আমি।
একটু চুপ থেকে রঘু বলল " আসলে ওই ঘর দুটো খুব ভালো নয়। সন্ধ্যার পর থেকে ওই ঘর দুটো থেকে অদ্ভুত অদ্ভুত আওয়াজ আসে। যেন কেউ হেঁটে বেড়ায়। কথা বলে ফিসফিস করে। গোঙ্গানীর আওয়াজ পাওয়া যায় যেন কেউ তীব্র যন্ত্রণায় ছটফট করছে। দিনের বেলায় সব ঠিক থাকে। কিন্তু রাত হলেই.... আমি দিনের বেলায় ওই দিকের ঘর পরিষ্কার করি। এ বাড়ির সব কাজ বিকেলের আগেই সেরে রাখি। রাতে এদিকে আর আসিনা। "
সুদীপ গম্ভীর হয়ে কথা গুলো শুনলো। তারপর শুধু বলল " চাবি টা দিয়ে যাও।"
রঘু চলে যেতেই সুদীপ আমায় বলল " জানিস অমিত কাল রাতে যখন ঘুমাচ্ছিলাম হঠাৎ আমার খাট টা দুলে উঠল। কেউ যেন খাট টা ধরে টানছে। ভয়ে আমি উঠে বসলাম। দেখি কেউ কোথাও নেই। তুই তোর খাটে শুয়ে আছিস। ভাবলাম মনের ভুল। শুয়ে পড়লাম। আবার শব্দ। এবার চোখ খুলে দেখি মানুষের মত একটা অবয়ব আমায় হাতছানি দিয়ে ডাকছে। তারপর আর কিছু মনে নেই। আবার ঘরে যখন এলাম তখন বুঝলাম কিছু হয়েছে। কিন্তু কি হয়েছে জানিনা।"
আমি হেসে বললাম " ঘুমের ঘোরে স্বপ্ন দেখে তুই ওরকম করেছিলি। কিচ্ছু না। চল ঘর গুলো দেখে আসি। "
" হম্। " বলল সুদীপ।
*******
চাবি দিয়ে তালা খুলে দরজাটা ঠেলতেই ক্যাঁচ করে খুলে গেল সেটা আর তার সাথে সাথেই এক রাশ ঘন অন্ধকার ঝাপিয়ে পড়ল আমাদের ওপর। মনে হল ঘরের ভিতর দুরের দেওয়ালের সামনে কেউ যেন দাঁড়িয়ে আছে আর সে যেন রক্ত মাংসের এক মানুষ, কিন্তু মুখটা রক্তহীন ফ্যাকাশে। আমরা নিষ্পলক চোখে তাকিয়ে থাকতেই দেখি ওটা একটা বড় সাইজের ছবি। কিন্তু এতো জীবন্ত কোন ছবি কি কর হতে পারে? ঘরে ঢুকে জানালা গুলো খুলে দিলাম। ছবির সামনে গিয়ে দাড়ালাম। সার্টের ওপর ব্লেজার ও প্যান্ট পরিহীত এক মধ্য বয়স্ক ইংরেজ ভদ্রলোকের ছবি। মুখে দাড়ি। মোটা গোফ। চোখ দুটি নীলাভ। ছবির কিছু জায়গায় রং চটে গেছে। সুদীপ বলে উঠল " ইনি বোধহয় কেভিন এডওয়ার্ড। "
ঘরে আসবাব বলতে তেমন কিছু নেই। শুধু একটা হাতল ভাঙা চেয়ার আর একটা ভাঁজ করা কাপড় চেয়ারের ওপর। রঘু হয়ত পরিষ্কার করার জন্য রেখেছে।
সেই ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে এলাম পাশের ঘরে। এই ঘরে কিছু নেই। কিন্তু এক আশ্চর্য নিরবতা এই ঘর দুটি তে। সাথে গুমোট গরম আর চাপ চাপ অন্ধকার যা জানালা দিয়ে আসা আলোও যেন ভাঙতে পারছে না। সাথে একটা চাপা গন্ধ। কিন্তু গন্ধ টা খুব অস্বস্তিকর। ঘর দুটো যদিও রঘু ভালোই পরিষ্কার করে রেখেছে। আর একটা জিনিসও মনে হল, ঘর দুটোয় যেন কোনো চাপা বিষন্নতা ছেয়ে আছে।
ঘর থেকে ছবিটা সরিয়ে দাওনা কেন? আঁতকে উঠলো রঘু। কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে বলল " সরিয়ে ছিলাম বাবু কয়েক বার। কিন্তু যত বার সরিয়েছি রাতে খারাপ খারাপ স্বপ্ন দেখেছি। অদ্ভুত অদ্ভুত কাজ হয়েছে বাড়িতে। তারপর থেকে আর সরাই না। "
ঘর থেকে ছবিটা সরিয়ে দাওনা কেন? আঁতকে উঠলো রঘু। কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে বলল " সরিয়ে ছিলাম বাবু কয়েক বার। কিন্তু যত বার সরিয়েছি রাতে খারাপ খারাপ স্বপ্ন দেখেছি। অদ্ভুত অদ্ভুত কাজ হয়েছে বাড়িতে। তারপর থেকে আর সরাই না। "
********
রাতে কফি নিয়ে বসলাম লিখতে। মাঝের বড় ঘরে বসেছি। মাথায় কিছু আসছে না। কিছু তো লিখতেই হয়। মাত্র পাঁচ দিন ছুটি পেয়েছি। তার মধ্যে দুই দিন প্রায় শেষ।
ভাবছি কি লিখি। কখন যেন চোখ টা লেগে এসেছে। হঠাৎ কিসের একটা শব্দ হল। ঘরের বা দিকের পর্দা টা যেন নড়ে উঠল। সুদীপ তো ঘুমাচ্ছিল। কালকের ওই ঘটনার পর কেমন চুপ হয়ে গেছিল। আজ ওই ঘর দুটো দেখার পর পুরো চুপ হয়ে গেছে। সেভাবে কোনো কথাই হয়নি ওর সাথে।
কিন্তু একি! সুদীপ কোথায় যাচ্ছে এত রাতে? " এই সুদীপ, সুদীপ? " ডাকলাম আমি। ও যেন শুনতেই পেলনা ডাক। স্থির শূন্য দৃষ্টিতে ঘরের ডান দিকের দরজার দিকে এগিয়ে চলেছে। ভেজানো দরজা যেন নিজে থেকেই খুলে গেল। সুদীপ এগিয়ে চলেছে। যেন নিশীতে পেয়েছে। আমিও চললাম পিছনে পিছনে। গিয়ে দাড়াল বন্ধ ঘরের দরজার সামনে। ঘরের তালা টা আমরা বেরনোর সময় আটকে দিয়ে রঘু কে চাবি দিয়েছিলাম। কিন্তু এখন সেই তালা খোলা, দরজা টা শুধু ভেজানো। হালকা করে সুদীপ দরজায় ঠেলা দিতেই দরজা খুলে গেল। কিন্তু একি! অন্ধকারে কেউ যেন দাঁড়িয়ে আছে ব্লেজার, প্যান্ট পরে। রক্তহীন ফ্যাকাশে সাদা মুখ। মুখে একটা নিষ্ঠুর ক্রূঢ় হাসি।
********
আমি যেন কোথায় হারিয়ে যাচ্ছি। আজ থেকে প্রায় বছর সত্তর পচাত্তর আগের কিছু আবছা হয়ে আসা ছবি যেন ভেসে উঠলো চোখের সামনে । ঘরে যে চেয়ার টা দেখেছিলাম দিনের বেলায় সেই চেয়ারে বসে আছে দীপেন্দ্র বাবু। পাশের আরেকটি চেয়ারে কেভিন। তাদের সামনে টেবিলে রাখা মদের বোতল ও গ্লাস। দুজনেই নেশাতুর। হঠাৎ চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়াল কেভিন। তুলে নিল একটা লম্বা কাপড়। পেচিয়ে ধরল দীপেন্দ্রর গলা। দীপেন্দ্রর মনে হল তার গলায় কেউ একটা কাপড় পেচিয়ে টানছে। মদের নেশা তখন এক ঝটকায় অনেক টা কেটে গেছে। এক টান দিয়ে কাপড় টা টেনে খুলে হেঁচকা টান দিতেই এডওয়ার্ড হুমড়ি খেয়ে পড়ল সামনে।
দীপেন্দ্র বাবু চিৎকার করে উঠলেন " বিশ্বাসঘাতক। তুই আমাকে মারার জন্য এখানে নিয়ে এলি? " বলেই হাতে ধরা মদের বোতল টি সজোরে বসিয়ে দিল মাথায়। মাথা থেকে ফিনকি দিয়ে রক্তপাত হতে শুরু করল এডওয়ার্ডের। কিছুক্ষণের মধ্যেই কেভিন লুটিয়ে পড়ল মৃত্যুর কোলে।
হঠাৎ আমার পাশে একটা সজোড়ে শব্দ হল। দেখলাম সুদীপ দৌড়ে গিয়ে "কেভিন... আমি... আমি মারতে চাইনি তোকে।" বলতে বলতে চিৎকার করে সামনে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেল।
***********
সুদীপকে আর ওই বাড়িতে বেশিক্ষণ রাখা গেল না। জ্ঞান আসার পরই উঠে বসে বলল কলকাতা ফিরতে চায় সে। আর এক মুহূর্ত থাকবে না সেখানে। চোখে মুখে একটা আতঙ্ক ছেয়ে রয়েছে ঘন মেঘের মতন। সেই দিনই দুপুরে চালিয়ে রওনা দিলাম কলকাতার পথে। রাস্তায় কোনো কথা বলেনি। শুধু নিষ্প্রান নিষ্পলক ভয়ার্ত দৃষ্টিতে চেয়ে থাকল সারা রাস্তা।
বাড়ি ফিরেও অনেক দিন অসুস্থ ছিল সুদীপ। একটা ট্রমার মধ্যে কেটেছে ওর অনেক দিন।
***********
এখনকার সুদীপ তখন ছিল দীপেন্দ্র নারায়ণ রায়। কেভিন এডওয়ার্ড ছিল তার প্রাণের বন্ধু। কেভিন কলকাতায় থাকাকালীনই পরিচয় হয় দীপেন্দ্র বাবুর সাথে। পরিচয় বন্ধুত্বের জায়গা নিল। হয়ে উঠল নতুন ব্যাবসার অংশীদার। দীপেন্দ্রর তখন এত প্রতিপত্তি ছিল না। আর কেভিন পরিবারবর্গ ত্যাগী অবিবাহিত যুবক। ব্যাবসার লাভের অঙ্ক ভালো আসতে শুরু করল। কেভিন ব্যাবসা বিস্তারের জন্য বিহারে যা আজ ঝাড়খন্ড যাতায়াত শুরু করল। সুবিধার জন্য সেখানেই একটা বাড়ি বানালো। নাম দিল 'এডওয়ার্ড হাউজ'। ভালোই দিন কাটছিল। এক দিন বন্ধু দীপেন্দ্রকে আমন্ত্রণ জানাল সে। এডওয়ার্ড কিন্তু তখন অন্য চিন্তায় নিমগ্ন। ব্যাবসার অংশীদার যদি না থাকে তাহলে পুরো লাভ্যাংশ তার। দীপেন্দ্র পৌছল এডওয়ার্ড হাউজে। কেভিন বন্ধুকে পেয়ে খুব খুশি। আদর আপ্যায়নের কোনো ত্রুটি রাখল না। রাতে খাওয়ার পর শুরু হল সুরা পান। এই চেয়ারে বসেই চলছিল তার মদ্যপান। মদের নেশায় ডুবে গেল দীপেন্দ্র। এডওয়ার্ড তখন নেশাতুর।
হঠাৎ চেয়ার ছেড়ে উঠে দীপেন্দ্রকে মারতে গেল কেভিন। কিন্তু নিয়তির খেলায় মরতে হল তাকেই।
ইংরেজ শাষন কাল। তার ওপর কেভিন সাহেব মানুষ। এই হত্যার কথা যদি সবাই জেনে যায় তাহলে তার কঠিন সাজা কেউ আটকাতে পারবে না। তাই তিনি ঘরের মেঝে খুঁড়ে সেখানেই তাকে কবরস্থ করলেন। সবাই জানল সাহেব ইংল্যান্ড পাড়ি দিয়েছেন ব্যাবসার কাজে।
এরপর বাড়ি টা দখল করে আরো ঘর বাড়ালেন দীপেন্দ্র। ততদিনে তার ব্যাবসা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। বাড়ির পুনঃনির্মান করলেন। ঘর বাড়ালেন। ওই ঘর দুটো কিছু করলেন না পাছে ধরা পড়ে যান। কিন্তু কোনো দিন ওই বাড়িতে তিনি থাকতে পারলেন না। এক রাতে তিনি ছিলেন। কিন্তু পর দিন সকালেই তাকে অসুস্থ অবস্থায় কলকাতায় নিয়ে আসা হয়। তিনি আর উঠতে পারেননি। এর কিছু দিন পরেই তিনি মারা যান।
বিঃদৃঃ সুদীপ তখনও অসুস্থ। সব সময় ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে থাকত। মাঝে মাঝে চিৎকার করে উঠত। ছাড়া ছাড়া কিছু ঘটনা বেড়িয়ে আসত তার মুখ থেকে। সেগুলো গুছিয়েই ঘটনা টা লিখলাম।
*********
এর বেশ কয়েক মাস পর আবার গেলাম সেই 'এডওয়ার্ড হাউজ ' এ। সাথে এবার গেল সুদীপের ভাই প্রদীপ। গিয়েই ছবির ঘরে গেলাম। মেঝে ভেঙ্গে ফেললাম। নিচ থেকে বেড়িয়ে এল প্রায় মিশে যাওয়া কঙ্কালের কিছু হাড়। স্থানীয় চার্চের সাথে যোগাযোগ করে তুলে দিলাম তাদের হাতে।
*********
কিছু দিন আগে সুদীপ এল আমার বাড়ি। এখন ও পুরো সুস্থ। জানালো এডওয়ার্ড হাউজ এখন সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। আর রঘুও আর কোনো অস্বাভাবিক কিছু অনুভব করে না। আর বাড়ি টাও খুব তাড়াতাড়ি বিক্রি হয়ে যাচ্ছে।
এরপর বাড়ি টা দখল করে আরো ঘর বাড়ালেন দীপেন্দ্র। ততদিনে তার ব্যাবসা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। বাড়ির পুনঃনির্মান করলেন। ঘর বাড়ালেন। ওই ঘর দুটো কিছু করলেন না পাছে ধরা পড়ে যান। কিন্তু কোনো দিন ওই বাড়িতে তিনি থাকতে পারলেন না। এক রাতে তিনি ছিলেন। কিন্তু পর দিন সকালেই তাকে অসুস্থ অবস্থায় কলকাতায় নিয়ে আসা হয়। তিনি আর উঠতে পারেননি। এর কিছু দিন পরেই তিনি মারা যান।
বিঃদৃঃ সুদীপ তখনও অসুস্থ। সব সময় ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে থাকত। মাঝে মাঝে চিৎকার করে উঠত। ছাড়া ছাড়া কিছু ঘটনা বেড়িয়ে আসত তার মুখ থেকে। সেগুলো গুছিয়েই ঘটনা টা লিখলাম।
*********
এর বেশ কয়েক মাস পর আবার গেলাম সেই 'এডওয়ার্ড হাউজ ' এ। সাথে এবার গেল সুদীপের ভাই প্রদীপ। গিয়েই ছবির ঘরে গেলাম। মেঝে ভেঙ্গে ফেললাম। নিচ থেকে বেড়িয়ে এল প্রায় মিশে যাওয়া কঙ্কালের কিছু হাড়। স্থানীয় চার্চের সাথে যোগাযোগ করে তুলে দিলাম তাদের হাতে।
*********
কিছু দিন আগে সুদীপ এল আমার বাড়ি। এখন ও পুরো সুস্থ। জানালো এডওয়ার্ড হাউজ এখন সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। আর রঘুও আর কোনো অস্বাভাবিক কিছু অনুভব করে না। আর বাড়ি টাও খুব তাড়াতাড়ি বিক্রি হয়ে যাচ্ছে।